Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st ডিসেম্বর ২০২২

ডিজিটালাইজেশন, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ,ফরিদপুর


প্রকাশন তারিখ : 2022-10-06

ফরিদপুর

হাসানউজ্জামান

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২২ । ১২:০৪ । প্রিন্ট সংস্করণ

ফলো করুন-

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যাপীঠ ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার বাতিঘর। বিগত কয়েক বছরের স্থবিরতা ও অব্যবস্থাপনার নাগপাশ কাটিয়ে সারাদেশের মধ্যে অনন্য উদাহরণ হয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহত্তর ফরিদপুরসহ আশপাশের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিনিয়ত শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে রাজেন্দ্র কলেজ। করোনাকালে টানা দুই বছর শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলেও অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

করোনাকালে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে অনেকটা ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করে তোলার কাজে হাত দেন অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা ও তাঁর টিম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওই কলেজেরই ছাত্র থেকে শিক্ষক পদে আসীন হওয়া এ গণিতবিশারদ। দীর্ঘদিনের চলে আসা নানা অনিয়ম থামাতে শুরুর দিকে বেশ বেগ পেতে হয় তাঁকে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন তরুণ ও উদ্যমী শিক্ষকের প্রচেষ্টায় কলেজের সামগ্রিক কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে।

 

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অম্বিকাচরণ মজুমদারের জন্ম-মৃত্যুর দিনটিও পালন করা হয়নি গত এক যুগে। প্রয়াত অম্বিকাচরণ মজুমদারের জন্মদিবসে ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, কেক কাটা এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। উপমহাদেশের খ্যাতিমান এই রাজনীতিক ও শিক্ষানুরাগীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে গত ৬ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বড় করে অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করলে সাড়া পড়ে সব মহলে। নিষ্ফ্ক্রিয় এবং ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক সবাই সতর্ক হতে থাকেন, শুধরে নিয়ে নিয়মের মধ্যে পথচলার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সম্প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি, নিবন্ধন, পরীক্ষার ফি জমা- সবকিছু ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ব্যাংকিং (আর্থিক পেমেন্ট) জটিলতার অবসান করেছে। ফলে কলেজের কাউন্টারে লাইন বা ব্যাংকে লাইন দিয়ে তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। বিভিন্ন বিভাগে দৌড়াদৌড়িও কমেছে, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে। আগে শিক্ষার্থীদের তথ্য খুঁজে পাওয়া যেত না। বর্তমানে ই-পেমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য এক ক্লিকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিজস্ব স্মার্টফোনের মাধ্যমে সব ধরনের ফি জমা এবং ফরম ফিলআপ করতে পারছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্লে স্টোরে রয়েছে মোবাইল অ্যাপ, যার মাধ্যমে তাঁদের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবেন (অ্যাপের কাজ চলমান)।

রাজেন্দ্র কলেজের বর্তমান ওয়েবসাইট এটুআইর পাইলট প্রজেক্ট। বাংলাদেশের সব সরকারি কলেজে রাজেন্দ্র কলেজের ওয়েবসাইটকে পাইলট ধরে এটুআই কাজ করছে।


অনলাইন কার্যক্রম
* শিক্ষার্থীদের ফলাফল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ এবং অ্যাডমিট কার্ড ও নম্বরপত্র দেওয়া হচ্ছে।
* সেভ দ্য পেপার স্লোগান সামনে রেখে ই-নথির কার্যক্রম নিয়ে একটি টিম কাজ করে যাচ্ছে।
* ই-নোটিশ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভাগ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্য নোটিশ পাঠানো এবং পুশ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
* বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাজিরা নিশ্চিত করা এবং অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
* কলেজের দুটি ক্যাম্পাসকে এক নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং ১২০টি আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটর করার জন্য কাজ চলছে।
একাডেমিক কার্যক্রম
* শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কলেজ কার্যক্রমের শুরুতে অ্যাসেমব্লি, জাতীয় সংগীত এবং শপথের মধ্য দিয়ে পাঠদান শুরু করা হচ্ছে।
* এইচএসসি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা ও তাদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাঁরা নিবিড়ভাবে শিক্ষার্থীদের মনিটর করছেন।
* এইচএসসি শিক্ষার্থীদের মনিটরিংয়ের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, অনুপস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ডেকে মুচলেকা গ্রহণ এবং ভালো ফলাফলের অঙ্গীকার করানো হচ্ছে।
* অনার্সের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কোর্সভিত্তিক ক্লাস টেস্ট গ্রহণ এবং বিভিন্ন মোটিভেশন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
* অনার্সের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভাগভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।

এ ছাড়া যথাযোগ্যভাবে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের মাধ্যমে কলেজটির ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে। এক দশকের অচলায়তন ভেঙে, ক্ষমতাসীনদের লেজুড়বৃত্তির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে স্বকীয়তা নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর দিনব্যাপী কলেজের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে প্যান্ডেল টানিয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রতিটি বিভাগ থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইউনিফর্ম ব্যানারের মাধ্যমে বিজয় র‌্যালি করা হয়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং মঞ্চনাটক প্রদর্শন করেন।

গত ২১ ফেব্রুয়ারিতেও যথাযোগ্য মর্যাদায় কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইউনিফর্ম ব্যানারের মাধ্যমে প্রভাতফেরির আয়োজন ছিল দৃষ্টিনন্দন। কলেজের শহীদ মিনারে প্রতিটি বিভাগ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়, যা দেখা যায়নি বিগত বছরগুলোতে। একইভাবে স্বাধীনতা দিবসও উদযাপন করে রাজেন্দ্র কলেজ। গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৯টি বিভাগ, ডিগ্রি এবং একাদশ শ্রেণিতে কলেজের দক্ষ শিক্ষকরা আলোচনা অনুষ্ঠান এবং কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। ১১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই যেন নতুন করে জেগে উঠেছেন আড়মোড়া ভেঙে, দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের গর্ব আর অহংকার আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে।
কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস
* প্রথমে আন্তঃবর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিম গঠন এবং পরবর্তী সময়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলার আয়োজনের মাধ্যমে জমজমাট অবস্থায় ফিরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
* আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হয়েছে।
* বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন, বিশেষ করে কলেজের গত বসন্তবরণ উৎসব দেশব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজেন্দ্র কলেজের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ঘটনা ছিল কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং মেডিকেলে রাজেন্দ্র কলেজের যেসব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের সংবর্ধনার (ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট প্রদান) মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা হয়।
গত বছর বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ ও মূল্যায়ন ছিল সাম্প্রতিক সময়ের একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করার জন্য প্রথমে ৭৫০টি বই বিতরণ করে তাঁদের পাঠ করানো হয় এবং পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে প্রথম ১০ জনের মধ্যে এককালীন অর্থবৃত্তি, মহামূল্যবান বই, ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ বছরও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হয়েছে এবং দ্রুতই মূল্যায়ন কাজ শুরু হবে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা।
'গ্রিন ক্যাম্পাস' স্লোগান সামনে রেখে গত বর্ষা মৌসুমের শেষে কলেজের দুই ক্যাম্পাসে ফলদ ও ভেষজ গাছের ১ হাজার ২০০ চারা লাগানো হয়েছে এবং চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা এগুলো পরিচর্যা করার জন্য নিয়মিত তদারকি করছেন।
লেখক
ফরিদপুর
প্রতিনিধি